শিক্ষকতাকে এক সময় ঘৃণা করতাম, পরে বুঝতে পারলাম যে আমার স্কুলটাই মূলত প্রধান সমস্যা ছিল।


বেশি দিন আগের কথা নয়, শিক্ষকতা করব না বলে ঠিক করেছিলাম। তবে এখন আমার চোখ খুলে গেছে-বুঝতে পেরেছি নেতৃত্ব কী জিনিস। পার্থক্যটা আসলে প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে। 

আগের জনের অধীন কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল, আমি এমন একটা জায়গায় আটকে গেছি যে আমার আর করার মতো কিছু নাই। দিন শেষে বাড়ি ফিরতে হতো উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা নিয়ে। স্কুলে আমরা প্রচন্ড চাপের মধ্যে থাকতাম যাতে করে বাচ্চাদের প্রত্যাশিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, যেন বোঝা যায় যে স্কুলটার উন্নতি হচ্ছে। স্কুলের লিডারশিপ টিমের সদস্য হওয়ায় প্রধান শিক্ষক চাইতেন আমি যেন অন্যদের সাথে দুরত্ব বজায় রাখি, আর এভাবে আমি আমার সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম। 

ব্যাপারটা আরও খারাপ হল যখন দেখলাম একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী বার বার আমাকে শারীরিকভাবে আঘাতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। একদিন আমাকে মাথায় আঘাত নিয়ে হাসপাতলে ভর্তি হতে হল এবং মনে হল যেন নাকটা ভেঙ্গে গেছে। 

আশা করেছিলাম প্রধান শিক্ষক আমাকে সহযোগীতা দেবেন। পরদিন কাজে ফিরে আবিস্কার করলাম ঐ ছাত্রটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। আমি বোঝাতে চাইলাম যে আমাদের সুরক্ষা প্রয়োজন। জবাবে আমাকে শুধু বলা হল যে, আমি অতিরঞ্জিত করছি। কোন পরিবর্তন এলো না। 

সারা স্কুল জুরে হিংস্রতা আর হানাহানির সংস্কৃতি আদর্শে পরিণত হয়। শিক্ষকরা প্রায়ই PPA(পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও মূল্যায়ণের)-এর জন্য নির্ধারিত সময় পেতেন না। কারন তারা তখন ছেলেমেয়েদের আচরণগত ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত। যখন কেউ সাহায্য চাইতো, তাদের ভেতর এই বোধটাই জাগানো হতো যে ভুল আসলে  তাদেরই, এবং সেই কারনে বিষয়টা নিজেদেরকেই সুরাহা করতে হবে। 

মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকে--সবাই কোন রকম সাহায্য পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। অনেক নিভৃতে তাদের রুমে গিয়ে কান্না করতো। আমার নাভিশ্বাস উঠে গেল। 

তখন আমি স্কুল পরিবর্তন করলাম--দেখলাম পেশাটা আসলে কোন সমস্যা না, সমস্যাটা হল পরিচালনা। আমার নতুন প্রধান শিক্ষক যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের কথা সবার আগে বিবেচনা করেন। শিক্ষাকে এখানে মজার একটা বিষয় হিসাবেই দেখা হয়, এবং শিশুদেরকে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশের অনুসন্ধানে উৎসাহীত করা হয়। আমাদের কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অজর্নে বাধ্য করা হয় না, কারন সেটা আসলে সত্যিকারের শিক্ষা অর্জনে কাজে আসে কী?

প্রধান শিক্ষক তার অধীনস্তদের মঙ্গল হয় এমন কিছুকে খুব গুরত্ব দেন। আমাদের প্রায় সকালের নাস্তা দিয়ে, আর অভিভাবক সমাবেশের সময় খাবার দিয়ে তুষ্ট করা হয়। আর কোন কাজ শেষে সংক্ষিপ্ত ম্যাসেজ দিয়ে  ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। আমাদের পেশাগত লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহীত করা, সবল দিকগুলোর স্বীকৃতি দেয়া এবং তা ব্যবহারের জন্য উৎসাহীত করা হয়। 

আমি যেন আমার জীবন ফিরে পেলাম। পড়ানোর সাথে সাথেই নম্বর প্রদানের কাজটি সারা হয়, তাই যখন থেকে যোগদান করেছি তখন থেকে আমাকে কোন বই নিয়ে বাসায় যেতে হয় না, আর ছুটির দিনগুলোতে স্কুল বন্ধ থাকায় ক্লাসরুম কেন্দ্রিক কোন কাজের প্রত্যাশাও থাকে না। অন্যদিকে, কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা হল এই যে, আমরা বিশ্রাম নেই এবং স্কুল খুললেই যেন পুর্নউজ্জীবিত হয়ে কাজে যোগ দিতে পারি।  

আমার আগের কথা চিন্তা করলে বর্তমান অবস্থাটা অবিশ্বাস্য ঠেকে। আমি আবার শিক্ষকতার প্রেমে পড়েছি, এবং আমি এখন বিশ্বাস করি যে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা কাজ- শুধু তোমার যেটা করা প্রয়োজন  তা হল সঠিক স্কুলটা খুঁজে নেয়া।  
    

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Open University Bed. Question Paper 2017 & 2018

নমুনা পাঠটীকা (Lesson Plan)