স্লেট পেনসিল ও কাঠের পেনসিল



স্লেট পেনসিল ও কাঠের পেনসিল
                                                               --সাযযাদ কাদির


ছিল দু’রকম পেনসিল: স্লেট পেনসিল ও কাঠের পেনসিল। কালো রঙের স্লেট পাথরের ফলকে লেখার জন্য ছিল ওই পাথরেরই পেনসিল। কালোর মধ্যে সেই পেনসিলের লেখা ফুটে উঠত সাদা রঙে। 
ছোট  বেলায় আমাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল ওই স্লেট আর পেনসিল। বলা হয়েছিল: স্লেটে লিখলে হাতের লেখা সুন্দর হবে। 
স্লেটের সুবিধা ছিল আরও নানা রকম। সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল অবশ্য খরচ বাঁচানোর ক্ষেত্রে। যত খুশি তত লিখে যাও, কারন স্লেট্ লিখে আবার তা মুছে ফেলা যেতো। লেখার সময় স্লেটের পাশে আমরা পানিতে ভেজানো ন্যাকড়া রাখতাম। লেখা শেষ হলে শিক্ষক বা অভিভাবক কাউকে দেখিয়ে তা ওই ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মুছে  আবার লিখতাম। 
লেখালেখির চেয়ে স্লেট বেশি উপকারে আসতো অঙ্ক কষার কাজে। হোম ওয়ার্কের খাতায়  “পাকা” করে তোলার আগে আমরা ”রাফ” করে নিতাম স্লেটে। ক্লাস ওয়ার্কও করা যেতো স্লেটে। কিন্তু পাথরের স্লেট আক্রা হয়ে গেল এক সময়ে, বাজারে এলো টিনের ও কাঠের “স্লেট”। স্কুলে ওই সব স্লেটে লেখালেখির চেয়ে পিটাপিটি জমত ভাল। শেষে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে স্যারেরা বলে দিলেন, ক্লাসে স্লেট আনা চলবে না। 
গেল স্লেটের যুগ, এলো রাফ খাতার আমল। সাদা কাগজের খাতায় লেখার জন্য পেলাম কাঠপেনসিল: নরম কাঠে মোড়া সীসার লেখনী, পেছনে টিনের পাতে আটকানো এক চুকরো লাল রবার-- লেখা মোছার জন্য এই পেনসিল আবার কয়েক রকম। নরম থেকে শক্ত পর্যন্ত কয়েক পর্যায়ের -- HB, 2H, 3H, 4H ইত্যাদি।আমাদের সময়ে জনপ্রিয় ছিল “ডিয়ার” (হরিণ) ব্র্যান্ড কাঠপেনসিল। বাড়ির পুরনো বাক্স-ট্রাংক খুঁজলে এখনও সেগুলোর দু’এক টুকরো পেয়ে যাবো। 
ফার্স্ট টারমিনাল, সেকেন্ড টারমিনাল পরীক্ষা পর্যন্ত স্যারেরা অনুমতি দিলেন কাঠপেনসিল দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার। কিন্তু ১৯৫৫ সালে ক্লাস ফোরের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য বলা হলো: খাতায় লিখতে হবে কালি-কলম দিয়ে। শুরু হল নতুন রকম প্রস্তুতি। 
প্রথমেই যোগাড় করতে হলো কালির দোয়াত। বসে থাকা ব্যাঙের মতো দেখতে একটা দোয়াত পেলাম; তাতে কোনও মুখা বা ঢাকনা ছিল না, তবে সেই দোয়াত নানাভাবে উপুড় করে ধরলেও কালি পড়ত না। দারুন ব্যাপার। 
মিটল দোয়াতের সমস্যা। এখন কালি। কালি যায় দু’রকমের: খোলা ও বড়ির আকারে এবং পুরিয়ায় গুড়ো অবস্থায়। দেশী-বিদেশী ভেদে দাম এক পয়সা থেকে চার পয়সা (এক আনা) পর্যন্ত। 
এরপর কলম। কলম মানে হ্যান্ডল। তাতে নিব লাগিয়ে নিতে হতো। নিব ছিল দু’রকম। এক রকম ছিল বেঁটে ও চ্যাপ্টা, আরেক রকম ছিল লম্বাটে ও সরু। বেঁটে নিবের লেখা হতো মোটা, লিখতে হতো গোটা-গোটা করে; আর লম্বা নিবের লেখা হতো চিকন, লিখতে হতো টেনে-টেনে বড়-বড় করে। 
দোয়াতের কালিতে হ্যান্ডলে লাগানো নিব চুবিয়ে-চুবিয়ে লিখতে হতো আমাদের। প্রথমে কেবল পরীক্ষার খাতায়, পরে হোম ওয়ার্কের খাতায়ও। 
কিন্তু কালি ও কলমে পরিবর্তন আসতে দেরি হলো না। কষ্ট করে গরম বা ঠান্ডা পানিতে কালি  গুলে নেয়ার ঝামেলা ঘুচল। বাজারো “সুলেখা”, “হিরো”, “পেলিক্যান”, “ইয়ুথ”-কত রকম কালি। নিব লাগানো ফাঁপা হ্যান্ডল-ও এলো, যার মধ্যে কালি ভরেনেয়া যেতো। শেষে পেলাম ঝরনা-কলম (ফাউনটেন পেন)। “রাইটার”, “পাইলট”, “পারকার”, “সোয়ান”- কত নামের রকম কলম। 
তারপর এলো  এই বলপেন বা ডট পেন। স্যারেরা বললেন, ওগুলো দিয়ে লিখলে হাতের লেখা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু দুর্মূল্য হয়ে গেল সাদা কাগজ। 


নানা রঙের দিন থেকে (আংশিক)

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Open University Bed. Question Paper 2017 & 2018

নমুনা পাঠটীকা (Lesson Plan)

শিক্ষকতাকে এক সময় ঘৃণা করতাম, পরে বুঝতে পারলাম যে আমার স্কুলটাই মূলত প্রধান সমস্যা ছিল।