স্কুলে কেন ইউনিফর্ম পরতে হয়?


শার্ট, টাই এবং ব্লেজার আমার পছন্দের পোশাক না যদিও, তাই বলে স্কুলে ইউনিফর্ম পরিধানের ধারনাটিকে আমি একেবারে ছুঁড়ে ফেলে দেব না। স্কুলের পোশাক পরলে আমাদের এক ধরনের গর্ব জাগে, স্কুলের একটি পরিচয় সৃষ্টি করে। স্কুলের ছাত্র হওয়ার জন্য পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
“তুমি যে একটি প্রতিষ্ঠানের অংশ, ইউনিফর্ম সেই পরিচয় বহন করে। পোশাকটি পরিধান কওর এই বুঝান হয় যে আমরা সবাই একত্রে আছি” বলেন নেইলি ওয়েড একাডেমির প্রধান শিক্ষক জেসন উইং।
“আবার তুমি যদি গর্বের সাথে তোমার ইউনিফর্মটি পর, এতে বোঝায় তুমি অর্ধেকটা সম্মান অর্জন করে ফেলেছ, কোন প্রতষ্ঠিানরে যে সামগ্রীক পরচিয় সেটাকে তুমি ধারণ করে ফেল।”
ইংরেজির শিক্ষক ক্লেয়ার হাউলেট একই কথা বলেন, “ স্কুলের পোশাক ছাত্রদের মধ্যে এই বোধ জাগিয়ে তোলে যে তারা নির্দিষ্ট একটি স্কুলের অন্তর্ভুক্ত এবং এলাকার মধ্যে স্কুলের জন্য পরিচয় তৈরি করে। 
যেসব স্কুল পোশাক পরিচ্ছদে বেশি আনুষ্ঠানিকতা মেন চলে আমার মনে হয় আমার স্কুলটাও সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এই সেপ্টম্বর থেকে পুরানো জাম্পার এবং পোলো শার্টের পরিবর্তে আমি শার্ট আর ব্লেজার পরতে যাচ্ছি। কিছু ছাত্রছাত্রী পরিবর্তনের বিষয়ে অভিযোগ করেছে, কিন্তু মোদ্দা কথা হল জাম্পার আর পলো শার্ট পরলে বাচ্চা বাচ্চা মনে হয়। 
স্কুলের পোশাক ছাত্রছাত্রীদের শেখায় পোশাক পরিচ্ছদে আর চালচলনে কীভাবে স্মার্ট হতে হয় ।
অনেকের মতে স্কুলের পোশাক শিক্ষার পরিবেশকে উন্নত করে কেননা এতে করে মনোযোগ বিঘ্নিত হয় না, স্কুলের কর্মকান্ডে সরাসরি আলোকপাত করা যায়। পরিবেশটাকে অনেক ভাবগম্ভীর করে তোলে যা ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যাচর্চায় সহায়তা করে।
স্কুলের পোশাকের সম্ভাব্য গুরুত্বের দিকটি হলো, সতীর্থদের থেকে পোশাক সম্পর্কিত কোন প্রকার চাপ থেকে মুক্ত রাখবে। যখন সবার পোশাক একই রকম হয় তখন তোমাকে দেখতে কেমন লাগছে এই ধারণা আর ততটা গুরুত্ব পায় না। হাল ফ্যামনের জামা কাপড় পরা নিয়ে কোন প্রতিযোগীতা থাকে না। তা না হলে শিক্ষার্থী আর অভিভাবক উভয়কেই অর্থকড়ি নিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়তে হতো। অন্যের সম্ভাব্য অপমানের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। একই রকম পোশাক পরে আরেক জনের পোশাক নিয়ে মজা করা সত্যিই কঠিন।
আমেরিকায়, যেখানে অনেক স্কুলের কোন নির্দিষ্ট পোশাক নেই, ‍প্রায় প্রতিদিন ১৬০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যায় না অন্যের হাতে পর্যদুস্ত হওয়ার ভয়ে। ওরা কি পরছে এই বিষয়টা এর সাথে জড়িত আছে। আদপে স্কুলের পোশাক অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়, অন্যতায় তারা হয়তো আক্রমনের শিকার হতে পারতো। যথাযথ ইউনিফর্ম পরিধান স্কুলের কঠোর নিয়মের উপলব্ধিটা জায়াগায়, স্কুলের শৃঙ্খলা রক্ষার মনোভাব গঠনেও সহায়তা করে।
ওয়াড্রবে রাখা পোশাকগুলোর চেয়ে স্কুলের পোশাক কম দামের যদিও, তারপরও অনেক স্কুলের পোশাকের দাম বেশিও হয়ে থাকে। অনেক স্কুল ঠিক করে দেয় কোথা থেকে জামা বানাতে হবে। যদি সস্তা দামের কোন কিছু পরে আসে তাকে শাস্তি দেয়া হয়।
সম্প্রতি লিভারেল ডেমোক্রাটের সদস্যরা ইংল্যান্ডের স্কুলের পোশাকের খরচের বিষয়ে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী ডেভিড লসের এ ব্যাপারে নতুন নির্দেশনা জারি করার কথা রয়েছে যা পোশাক সরবরাহের এই একক চর্চা সমাপ্তি করবে বলে আশা করা যায়। এতে করে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য যে কোন দোকান থেকে পোশাক কেনার ক্ষমতা অর্জন করবে। যদি স্কুল মনে করে যে তারা পোশাকে পরিবর্তন আনবে তবে দু-একটা ক্ষেত্রে তারা এই পরিবর্তন আনতে পারবে- হতে পারে তা জামার রঙ বা মনোগ্রামে। পরিবর্তন  যতটা সম্ভব দু-একটা ক্ষেত্রেই সীমিত রাখবে, বিশেষ করে লোগো সেলাই- এই রকম । একক সরবরাহকারী ব্যবস্থার এই পরিবর্তন পরিবারগুলোর পোশাকের খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
আট বছর বয়সী মেসি ভেলান্স বলল, “স্কুলের পোশাক আমার ভাল লাগে কারন সবাই একই রকম জামা পরে এবং কাউকে জামার জন্য আলাদা করা যায় না। আমার নতুন স্কুলের জামাটি দেখতে খুবই আকষর্ণীয় আর ভাল”
আমি হয়তো আমার স্কুলের জামাটি অন্য সময় পরব না, কিন্তু এটা আমাকে অংশীদার হওয়ার এক রকম বোধ জাগিয়ে তোলে। কি পরব এই চাপ থেকে মুক্ত রাখে আর অন্যের হিংসা-রোষানল থেকে বাঁচায়। স্কুলের পোশাকে কোন ফ্যাশন নেই, আর এই জন্য আমি মনে করি এই পোশাকটা দরকারি। 

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Open University Bed. Question Paper 2017 & 2018

নমুনা পাঠটীকা (Lesson Plan)

শিক্ষকতাকে এক সময় ঘৃণা করতাম, পরে বুঝতে পারলাম যে আমার স্কুলটাই মূলত প্রধান সমস্যা ছিল।